গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত
আমরা কমবেশি সকলেই শসা খেতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু মনে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত? আসলেই গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত! তাহলে চলুন জেনে নেই গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত।
শসা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত এটি সকলেরই জেনে থাকা অনেক জরুরী। তাই আজকের এই পোস্টে গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত তা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
পেজ সূচিপত্রঃ গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত
শসা খেলে কি উপকার পাওয়া যায়
শসা খুবই জনপ্রিয় একটি সবজি। এই সবজি প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। সালাদ ছাড়া যেমন আছে তেমন খাওয়া যায়। অনেকেই এর তরকারি খায়। এর ক্যালরি খুবই কম। 100 গ্রাম শসাতে 13 ক্যালোরি থাকে। গরমে প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত কিনা তা জানার আগে জেনে নিন শসা খাওয়ার উপকারিতাগুলো। শসা খাওয়ার উপকারিতা নিম্নরূপ:
- ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে ডায়রিয়া সব কিছুতেই শসা খুবই কার্যকরী। প্রচণ্ড গরমে শসা শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে শসার বিকল্প নেই।
- বদহজম, অ্যাসিডিটি, ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্ট্রাইটিস, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যায় শসা খাওয়া উচিত।
- বাতের হৃদরোগ অস্টিওপোরোসিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে শসা ভালো কাজ করে।
- শসার মধ্যে থাকা ফিস্টিন, একটি প্রদাহ-বিরোধী যৌগ, যা বয়স্কদের আলঝেইমার এবং অন্যান্য স্নায়বিক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- উপরন্তু, এই সুপরিচিত সবজি কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয়
সকল কিছু পরিমান মত খাওয়া উচিত। কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। এটি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত এটা জানতে হলে অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয় সেটি জানা অনেক জরুরী। চলুন তাহলে জেনে নেই অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয়। নিম্নে অতিরিক্ত শসা খেলে কি হয় তা দেওয়া হলোঃ
- শসা যদি ঠিক করে কাটা না হয় তার মধ্যে থাকা টক্সিন থেকে যায়। এই কারণে অনেক সময় শসা তেতো লাগে। শসা তেতো হওয়ার প্রধান কারণ হলো এর মধ্যে রয়েছে কিউকারবিটাসিন এবং টেট্রাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনিওড। এই ক্ষতিকর রাসায়নিকগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই শসা খেতে গিয়ে যদি তেতো লাগে সেটা খাবেন না।
- কিউকারবিটিন শসার মধ্যে পাওয়া যায়। এটি মূত্র বর্ধক হিসেবে পরিচিত। ফলে শসা যদি বেশি খান তাহলে অতিরিক্ত পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। ডিহাইড্রেশন হবে। তাই অতিরিক্ত শসা খাওয়া যাবে না।
- শসা খেলে কিডনির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে শসা কারণ এতে আছে পটাশিয়াম। কিন্তু আপনি যদি শসা বেশি মাত্রায় খান তাহলে হাইপারক্যালেমিয়ার মতো রোগ হতে পারে। তখন শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে গ্যাস, পেট ফোলা, ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- শসা বেশি খাওয়া মানে শরীরে বেশি জল প্রবেশ করা। আর শরীরে জল যত বেশি থাকবে তত রক্তের পরিমাণ বেশি হবে। আর রক্তের পরিমাণ বেশি হওয়ার অর্থ হলো রক্তনালীর উপর এবং হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি হওয়া।
- আপনি যখন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগে থাকেন তাহলে শসা খাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
কি কারণে শসা খাবেন
শরীরকে সতেজ ও সজীব রাখতে শসার বিকল্প নেই। শসায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ পানি থাকে। তাই গরমে শসা খেলে শরীরে পানির অভাব দূর হয়। এছাড়াও নিয়মিত শসা খেলে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। অনেকেই জানতে চান গরমে প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত কিনা, গরম হোক বা শীত, তাদের নিয়মিত শসা খাওয়া উচিত। এতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। শসা খাওয়ার কারণগুলি নীচে দেওয়া হল:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে
নিয়মিত শসা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে চাইলে নিয়মিত শসা খেতে হবে।
ভিটামিনের অভাব পূরণে
ভিটামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে দেহকে কর্মক্ষম রাখে। শসাতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি। যা দৈনন্দিন জীবনে ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে সক্ষম।
মেদ কমাতে
শরীরের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস করতে শসার তুলনা নেই। ওজন কমানোর জন্য শসায় রয়েছে বিভিন্ন ক্যালরিযুক্ত উপাদান। তাই ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে চাইলে আজ থেকেই নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যেস করুন।
সৌন্দর্য চর্চায় শসা
শশা রূপচর্চায়ও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি চুল পড়া কমাতে ও চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বক সজীব রাখতে চাইলে বেশি করে খান শশা। কারণ এটি ত্বকের টোনার হিসেবে কাজ করে।
তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে
গরমে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে শসা বেশ উপকারি। আমাদের মতো গরম প্রধান দেশগুলোতে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত শসা। আপনি শসা খেতে পারেন স্যুপ ও সালাদের সাথেও।
গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত
গরমে বাইরে বের হতেই ভয় পাই বেশির ভাগ মানুষ। সারাদিন পর সূর্য ডুবে গেলেও কমে না গরমের তীব্রতা। বাতাস যেন বাতাস নয়, আগুনের হাওয়া। এমন গরমে কোনো খাবার খেলেই ঠিকভাবে প্রশান্তি পাওয়া যায় না। তাই গরম কালে খাবার খেতে হবে বুঝেশুনে। এই গরমে তৈলাক্ত বা অতিরিক্ত মসলাদার খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না। এর বদলে খেতে হবে এমন খাবার যেটি আমাদের প্রশান্তি দিবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে গরমের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। যেসব খাবার পানির ঘাটতি মেটায় এবং শরীর শীতল রাখে সেগুলো খেতে হবে। আমরা অনেকেই জানতে চাই যে গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত। তবে বলা যেতে পারে খাবারের তালিকার শুরুতেই থাকে শসার নাম।
শসায় থাকে পানি, ফাইবার, কার্ব, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন সি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, লিউটিন, জিয়াজ্যানথিন, ভিটামিন কে, বিটা ক্যারোটিন এবং প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি খেলে এনার্জির ঘাটতি পূরণ হয় সেইসঙ্গে পাওয়া যায় শীতল অনুভূতি। গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত? উত্তরে আমি বলবো হ্যাঁ অবশ্যই খাওয়া উচিত।
মিক্সড আঁচার, কাসুন্দি এবং ধনে পাতা দিয়ে এই শসা মাখা বিক্রি করা হয় এই সমস্ত ফল মাখার দোকান গুলোতে। তবে বহু জায়গায় আবার শসা শুধুমাত্র কেটে লবণ মাখিয়েও বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে গ্রীষ্মকাল হোক কিংবা বছরের যে কোন অন্য ঋতুই হোক না কেন সব সময় পাওয়া যায়। সব মৌসুমেই শসার উপকারিতা রয়েছে। তাই যে কোন মৌসুমে যে কোন ভাবেই শসা খাওয়া সম্ভব। গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত তা আমরা বুঝতেই পারছি।
উপরোক্ত বিষয় থেকে গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত এটি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। আশা করা যায় গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত এটি সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন নেই আমাদের মনে।
শেষ কথাঃ গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত
এমন প্যাঁচপ্যাঁচে গরমে ঘেমে যেতে সময় লাগছে না। আর এই পরিস্থিতিতে একদম জাদুর মতো কাজ করে শসা। এই সবজিতে জলীয় অংশ বেশি থাকায় তা দেহে পানির ঘাটতি মিটিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও এতে উপস্থিত ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে নানা অসুখ থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই গরমে শসা জাদুর মত কাজ করে।
তীব্র গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। আর দেহে এই খনিজের ঘাটতি হলে একাধিক সমস্যা পিছু নেয়। তাই যেভাবেই হোক পটাশিয়ামের ঘাটতি মিটিয়ে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর এই কাজে আপনাকে ওতপ্রোতভাবে সাহায্য করতে পারে শসা। শসাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা এই খনিজের ঘাটতি মেটায়।
উপরোক্ত বিষয় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি। গরমে কি প্রতিদিন শসা খাওয়া উচিত এটি সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা পেয়েছি। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মনে আর কোন প্রশ্ন নেই আশা করি। ২৫৮৯০
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url